The real world is here... for the imagination go there Figments of Imagination

Sunday, June 3, 2012

Local bus cummuter

সকালে কোনরকমে নাকেমুখে কিছু গুজে দিয়েই বেরিয়ে পড়া রোজকার রোজগারের অভিযানে । গ্রীষ্মের দারুন রোদ্দুরে ছারখার হয়ে যাওয়া জীবনে বাস স্ট্যান্ডএ একটু ছোট  শেড । You know it feels like heaven। চারপাশে চাপা টেনসন ।বাস এলেই হালকা গুতোগুতি করে চটুল পায়ে বাস এর দরজার সামনে এসে দাড়ানো । তারপর নামতে থাকা যাত্রীদের উপেক্ষা করে উঠে যাওয়া বাসএ । এক ঝলকে মেপে নেওয়া সব যাত্রীদের । কে নামতে পারে আগে ? ছোট্ট হিসাব কষা মনে মনে । তারপর কোনো এক সিট এর সামনে দাড়িয়ে পরা ।
"দাদা, কোথায় যাবেন ?"
"ব্যাগ তা একটু ধরুন না । ধন্যবাদ ।"
অবশ্য সবাই আজকাল thanks বলে । ইংরেজি বলাটাই এখনকার দস্তুর । বাঙালি ধীরে ধীরে বাংলা ভুলছে । অর্ধেক হয়ে গেছে হিন্দী আর অর্ধেক ইংরেজি । ভাবতে খুব অবাক লাগে একসময় এই জাতিটাই নিজের ভাষার জন্যে লড়াই করেছিল ! 

গরমটাও পড়েছে বেশ এবার । পাশের লোকের ঘামের সঙ্গে নিজের ঘাম মাখামাখি হয়ে একাকার । কারো আবার একটু বেশি ঘাম । টপ টপ করে জলের ফোটার মত পড়ছে বসে থাকা লোকেদের উপরে । যারা জানালার ধরে তারা সবার হিংসের বস্তু । বেশ ফুরফুরে হাওয়া, বুকটা জুড়িয়ে দেয় । কন্ডাক্টর এর ক্রমাগত "পিছনে যান " উপেক্ষা করে দাড়িয়ে থাকি ঠায় । হাত দুটো জাম করে দিই হ্যান্ডেলে । কাধ দুটো রেগুলার ধাক্কার চোটে শক্ত হয় । পা দুটো থামের মত গেঁথে যায় বাসের ফ্লোরে । জানলার হাওয়ার একটা ছোট অংশ পাই আমিও । পিঠটা যদিও ঘেমে ভিজে যায় । 


এবার শুধু অপেক্ষার পালা । কখন সামনের বসে থাকা লোকগুলো উঠবে আর তুমি ন্যাচারাল প্রগ্রেসনে গিয়ে বসবে জানলার ধারে । আমার মত দূরের যাত্রীদের এই ন্যাচারাল প্রগ্রেসনের প্রচুর সুযোগ থাকে । আবার কখনো ভুল সিটের সামনে দাড়িয়ে পরে কেলেঙ্কারী । আসে পাসে সব সিট খালি হয়ে যায় । আমার সামনে দুটি লোক স্থানুর মত বসে আছে । এদের ও গন্তব্য আমার মত দুরে । বিরক্তিকর ।


রুমাল দিয়ে ঘাম মুছি আর রোজকার এই একঘেয়ে স্ট্রাগল এ সামিল হয়ে যাই । জানলার বাইরে খোলা হাওয়া, বিস্তীর্ণ আকাশ, মুক্ত জীবন । জানলার ভিতরে ইঁদুর দৌড় । মনে মনে হাসি । কোন পাগলে ভেবেছিল যে সব মানুষ একদিন ইঁদুর হয়ে যাবে ! মাথার ভিতর একের পর এক গভীর চিন্তা জাগে । নিজেকে হঠাত বিশাল দার্শনিক মনে হয় । মনে হয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাই বহুদূরে । মুক্ত জীবনের খোঁজে । পকেটের কাছে হাতের খোঁচা লাগে । মুহুর্তে সজাগ হয়ে যায় সব কত ইন্দ্রিয় ।
এই লাইন এ পকেটমারের অভাব নেই । পকেটে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ । সাবধান । তারপর দেখি আমারি মত নিরীহ, গোবেচারা আর এক ইঁদুর । মুচকি হেসে আবার চিন্তা চালু হয়ে যায় দার্শনিকের ।


সামনের সিট খালি হয় । ন্যাচারাল প্রগ্রেসনে আমি চলে যাই কাঙ্খিত জানলার ধারে । মুহুর্তে সংসার সুখের হয়ে যায় । অফিস মনে হয় ভালই তো । বাড়ি ফিরে কি করব সন্ধ্যা তা তার ফিরিস্তি দিই মনে মনে । জানলার বাইরে মুক্ত জীবনের খুব কাছে আমি তখন । তাই ভিতরের টানটাও প্রবলতর । ভিতরের টানে হারিয়ে যাই আমি । জানলার বাইরে তখন নীল আকাশ, প্রচন্ড রোদ্দুর । জানলার বাইরে তখন তারুণ্য আর মুক্ত জীবন । আমার চোখ তখনও জানলার বাইরে ।কিন্তু এখন তো আমি ইঁদুর  দৌড়ে জয়ী ।